কর্মচারী টার্নওভার ব্যবসায়িক পরিবেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এটি পরিমাপ করে কতজন কর্মচারী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোম্পানি ছেড়ে চলে
যায়। কর্মচারী টার্নওভার বৃদ্ধি পেলে তা কোম্পানির কার্যক্ষমতা এবং খরচের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই কর্মচারী টার্নওভার কীভাবে
সঠিকভাবে হিসাব করা যায় এবং তা উন্নত করার কৌশলগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগ পোস্টে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।
কর্মচারী টার্নওভার কী?
কর্মচারী টার্নওভার বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কর্মচারীদের ছেড়ে যাওয়ার হার। এটি প্রায়শই শতকরা হারে
প্রকাশ করা হয় এবং ব্যবসার সাফল্য, কর্মীদের সন্তুষ্টি এবং প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার ওপর নির্ভরশীল।
কর্মচারী টার্নওভার কীভাবে হিসাব করবেন?
কর্মচারী টার্নওভার হিসাব করার একটি সাধারণ সূত্র হলো:
টার্নওভার হার (%) = (নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যাওয়া কর্মচারীদের সংখ্যা ÷ সময়কালের গড় কর্মচারী সংখ্যা) × 100
উদাহরণ:
ধরা যাক, আপনার কোম্পানিতে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০০ জন কর্মচারী ছিল এবং এর মধ্যে ৩০ জন কর্মচারী কোম্পানি ছেড়ে গেছেন। তাহলে:
- গড় কর্মচারীর সংখ্যা: (বছরের শুরুতে এবং শেষে কর্মচারীর সংখ্যা যদি স্থিতিশীল থাকে, তাহলে ধরে নিন গড় কর্মচারীর সংখ্যা ২০০)
- ছেড়ে যাওয়া কর্মচারীর সংখ্যা: ৩০ জন
তাহলে টার্নওভার হার হবে:
[
\text{টার্নওভার হার} = \left(\frac{৩০}{২০০}\right) \times 100 = ১৫\%
]
এটি দেখায় যে ১৫% কর্মচারী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোম্পানি ছেড়ে গেছেন।
কর্মচারী টার্নওভার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উচ্চ টার্নওভার হার মানে কর্মচারীরা দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানিতে থাকতে ইচ্ছুক নন, যা কোম্পানির খরচ বাড়ায় এবং কর্মক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
নিয়মিত নতুন কর্মচারী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দিতে হলে সময় এবং অর্থ দুটোই বেশি ব্যয় হয়। তাই টার্নওভার হার নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
কর্মচারী টার্নওভার কমানোর কৌশল
১. কর্মচারীদের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করুন
কর্মচারীরা যদি তাদের কাজের পরিবেশ এবং সুবিধা নিয়ে সন্তুষ্ট না হন, তবে তারা সহজেই অন্য কোথাও চলে যেতে পারেন। কর্মীদের জন্য
সন্তোষজনক কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে তারা দীর্ঘমেয়াদে কাজ করতে ইচ্ছুক থাকেন।
- কাজের ভারসাম্য: অতিরিক্ত কাজের চাপ কর্মীদের মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্ষতি করতে পারে। তাই কাজের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
- সুস্থ কর্মপরিবেশ: নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত এবং ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করুন, যেখানে কর্মীরা সৃজনশীল হতে পারেন এবং তাদের মতামত গুরুত্ব পায়।
২. পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়ন সুযোগ
প্রতিষ্ঠানে সঠিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা থাকা উচিত, যা কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করবে। যদি কর্মচারীরা বুঝতে পারেন যে তাদের ক্যারিয়ার উন্নতির সুযোগ রয়েছে, তাহলে তারা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
- ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট: কর্মচারীদের দীর্ঘমেয়াদী ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করতে সহায়তা করুন। তাদের পেশাগত লক্ষ্যগুলোর সাথে মিলে যায় এমন প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়নমূলক প্রোগ্রাম প্রদান করুন।
৩. উপযুক্ত বেতন এবং সুবিধা প্রদান
বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদান করলে কর্মচারীরা সন্তুষ্ট থাকে। অনেক সময় কর্মীরা কম বেতনের কারণে চাকরি
ছেড়ে চলে যান, তাই কর্মচারীদের সাথে বেতনের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করা উচিত।
- প্রতিযোগিতামূলক বেতন: আপনার শিল্পখাতের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক বেতন নিশ্চিত করুন, যাতে কর্মচারীরা বাজারের তুলনায় কম বেতন পান না।
- অতিরিক্ত সুবিধা: যেমন বীমা, বোনাস, এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা প্রদান করতে পারেন।
৪. উন্নত নেতৃত্ব এবং ম্যানেজমেন্ট
কর্মচারীরা যদি নেতৃত্বের সাথে খুশি না হন, তাহলে তারা চাকরি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
সঠিক নেতৃত্ব এবং ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে স্থিতিশীল করে এবং কর্মচারীদের উৎসাহ দেয়।
- কমিউনিকেশন: কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়মিত এবং খোলামেলা আলোচনা করুন। তাদের সমস্যাগুলো শুনুন এবং দ্রুত সমাধান করুন।
- সাপোর্টিভ ম্যানেজমেন্ট: কর্মীদের কাজের সময় ম্যানেজমেন্টের সহযোগিতা পাওয়া জরুরি। কর্মীদের সমস্যাগুলোতে সহানুভূতিশীল হোন।
৫. প্রশংসা ও স্বীকৃতি প্রদান
কর্মচারীরা তাদের কাজের স্বীকৃতি পেলে সন্তুষ্ট থাকে এবং অনুপ্রাণিত হয়। যখন কর্মচারীদের
কাজের প্রশংসা করা হয়, তখন তারা তাদের কোম্পানির প্রতি আরও বেশি অনুগত থাকে।
- প্রশংসাসূচক প্রোগ্রাম: কর্মচারীদের মাইলফলক বা কাজের সফলতার জন্য নিয়মিত স্বীকৃতি দিন। এটি তাদের অনুপ্রাণিত রাখে।
৬. ফ্লেক্সিবিলিটি দিন
কর্মীদের কাজের সময় এবং স্থান নিয়ে ফ্লেক্সিবিলিটি প্রদান করুন। বিশেষ করে বর্তমান
সময়ে, অনেক কর্মী রিমোট ওয়ার্ক বা ফ্লেক্সিবল সময়সূচির সুবিধা পছন্দ করেন।
- রিমোট কাজের সুযোগ: যেখানে সম্ভব, কর্মচারীদের রিমোট কাজের সুযোগ দিন। এটি তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে।
কর্মচারী টার্নওভার ব্যবসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। টার্নওভার হার কমিয়ে আনার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের খরচ কমাতে পারেন
এবং কর্মক্ষমতা উন্নত করতে পারেন। সঠিকভাবে টার্নওভার হার নির্ধারণ করা এবং তা উন্নত করার জন্য উপযুক্ত কৌশল প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
কর্মচারীদের সন্তুষ্টি, প্রশিক্ষণ, বেতন এবং ফ্লেক্সিবিলিটি দিয়ে একটি ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরি করা আপনার প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।