ব্যবসা শুরু করতে হলে কেবল পুঁজি এবং পরিকল্পনাই যথেষ্ট নয়, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় অনুমতি ও লাইসেন্সেরও প্রয়োজন হয়। সরকারী নীতিমালা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে এই অনুমতি এবং লাইসেন্সগুলো
অপরিহার্য। নিচে ব্যবসা শুরু করার জন্য দরকারি বিভিন্ন অনুমতি এবং লাইসেন্স সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১. ব্যবসা নিবন্ধন
ব্যবসা শুরু করার প্রথম ধাপ হলো ব্যবসা নিবন্ধন করা। বাংলাদেশে ব্যবসা নিবন্ধনের জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়:
- ব্যবসা নাম নিবন্ধন: আপনার ব্যবসার নাম ট্রেড লাইসেন্সের সাথে মিলিয়ে নিকটস্থ সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা থেকে নিবন্ধন করতে হবে।
- পাইকারি বা খুচরা ব্যবসা নিবন্ধন: যদি আপনি পাইকারি বা খুচরা ব্যবসা পরিচালনা করেন, তবে ব্যবসার ধরনের উপর ভিত্তি করে আলাদা নিবন্ধন করতে হবে।
২. ট্রেড লাইসেন্স
ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি মৌলিক প্রয়োজন হলো ট্রেড লাইসেন্স। এটি ব্যবসার বৈধতা দেয় এবং স্থানীয় সরকার বা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ইস্যু করা হয়।
ট্রেড লাইসেন্স পেতে হলে আপনাকে নিম্নলিখিত তথ্য প্রদান করতে হবে:
- ব্যবসার নাম ও ঠিকানা
- মালিকের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র
- ব্যবসার ধরন
৩. ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN)
প্রতিটি ব্যবসার আয়ের উপর কর প্রদান করতে হয়। এজন্য আপনাকে একটি ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN) সংগ্রহ করতে হবে। এটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) থেকে সংগ্রহ করা যায়।
TIN নম্বর না থাকলে আপনি কোনো আয়কর ফাইল করতে পারবেন না এবং আইনগত সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
৪. মূল্য সংযোজন কর (VAT) নিবন্ধন
আপনার ব্যবসার আয় যদি সরকারের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে তবে আপনাকে মূল্য সংযোজন কর (VAT) নিবন্ধন করতে হবে। বাংলাদেশে VAT নিবন্ধন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে সম্পন্ন হয়।
এটি ব্যবসার আর্থিক লেনদেনকে স্বচ্ছ রাখে এবং সরকারী নির্ধারিত হারে কর প্রদান করতে সাহায্য করে।
৫. পরিবেশগত ছাড়পত্র
যদি আপনার ব্যবসা পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলে, যেমন: উৎপাদন বা শিল্পকারখানা, তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের থেকে পরিবেশগত ছাড়পত্র সংগ্রহ করা প্রয়োজন।
এটি নিশ্চিত করে যে আপনার ব্যবসা পরিবেশ বান্ধব এবং সরকারি মানদণ্ড অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে।
৬. বিশেষ লাইসেন্স এবং অনুমতি
কিছু বিশেষ ধরনের ব্যবসার জন্য অতিরিক্ত লাইসেন্স এবং অনুমতির প্রয়োজন হয়:
- খাদ্য ও পানীয় ব্যবসা: খাদ্য নিরাপত্তা এবং মান নিয়ন্ত্রণ বিভাগ থেকে অনুমতি প্রয়োজন।
- ফার্মাসিউটিক্যালস বা মেডিকেল সরঞ্জাম ব্যবসা: ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স প্রয়োজন।
- নিরাপত্তা ব্যবসা: এই ধরনের ব্যবসার জন্য সরকার কর্তৃক অনুমোদিত নিরাপত্তা লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়।
৭. ই-কমার্স এবং অনলাইন ব্যবসা
অনলাইন ব্যবসা বা ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনা করতে হলে, নিয়মিত ট্রেড লাইসেন্সের পাশাপাশি ই-কমার্স ব্যবসার জন্য নির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়। যেমন:
- অনলাইনে পণ্য বিক্রির জন্য বৈধ ওয়েবসাইট
- পেমেন্ট গেটওয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
- প্রাইভেসি পলিসি এবং গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা
৮. কর্মচারী সংক্রান্ত অনুমতি
যদি আপনার ব্যবসায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী থাকে, তবে শ্রম আইন অনুসারে তাদেরকে বৈধভাবে নিয়োগ এবং তাদের সাথে সঠিক চুক্তি করতে হবে।
এছাড়াও, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. ফায়ার সার্ভিস এবং বিল্ডিং অনুমতি
আপনার ব্যবসার সুরক্ষার জন্য ফায়ার সার্ভিস থেকে ফায়ার সেফটি সার্টিফিকেট এবং বিল্ডিং এর জন্য স্থাপত্য অনুমতি প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনার ব্যবসার স্থাপনা বড় বা জনবহুল স্থানে হয়।
ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স এবং অনুমতির প্রক্রিয়া কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু এটি একটি সুষ্ঠু ব্যবসা পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারী বিধি-বিধান মেনে কাজ করলে ব্যবসা পরিচালনা সহজতর হয় এবং ভবিষ্যতে যেকোনো আইনি জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
রিলেটেড লেখা :
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কীভাবে ব্যবসা বদলে দেবে
ছোট ব্যবসার জন্য গুগল অ্যাড ম্যানেজার কীভাবে ব্যবহার করবেন
VoIP VS Landline: আপনার ব্যবসার জন্য কোনটি সেরা?
Youtube Channel Link : https://www.youtube.com/@softlem